Banglarnetro
Dr. Neem Hakim

নেত্রকোনা সাহিত্য সমাজের ইতিবৃত্ত-মাহবুবুল কিবরিয়া চৌধুরী হেলিম


বাংলার নেত্র প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৫, ১:১৮ অপরাহ্ণ / ৬২
নেত্রকোনা সাহিত্য সমাজের ইতিবৃত্ত-মাহবুবুল কিবরিয়া চৌধুরী হেলিম

উনিশ শ উননব্বইয়ের শেষের দিকে গড়ে ওঠা নেত্রকোণা নাট্যসমাজ থেকে নেত্রকোণা সাহিত্য সমাজের উৎপত্তি। মূলত কবি সৈয়দ নাজমুল করিম ছিলেন এই সংগঠনের স্বপ্নদ্রষ্টা এবং সঞ্চালক। তাঁরই উদ্যোগে উনিশ শ একানব্বই সালে নেত্রকোনার সাহিত্যিক ও সুধীজনকে নিয়ে এই সংগঠন গড়ে ওঠে। কবি সৈয়দ নাজমুল করিমের উদ্যোগ ও সাংগঠনিকতায় শুরুতে এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন অধ্যাপক মোস্তফা কামাল, শিক্ষক অঞ্জন ভদ্র, অধ্যাপক ননী গোপাল সরকার, বিমান রায়, ছড়াকার গাজী মোবারক হোসেন, কবি ইয়াসিনুর রহমান, কবি মাহবুব কবির, সঙ্গীতশিল্পী কামরুল হাসান, কবি মনোয়ার সুলতান, অধ্যাপক ইকবাল আহমেদ, ইন্দুভূষণ পাল প্রমুখ। অধ্যাপক মোস্তফা কামালকে সভাপতি অঞ্জন ভদ্রকে সিনিয়র সহ-সভাপতি, সৈয়দ নাজমুল করিমকে সাধারণ সম্পাদক এবং অধ্যাপক ননী গোপাল সরকারকে যুগ্ম সম্পাদক করে একটি কার্যকরী কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে নেত্রকোনা সাহিত্য সমাজের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। মূলত সাহিত্য বিষয়ক আড্ডা এবং আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল সংগঠনের কাজ ও তৎপরতা। উনিশ শ একানব্বই থেকে পঁচানব্বইয়ের মধ্যে সংগঠনের সহচরদের মধ্যে এক ধরনের নিষ্ক্রিয়তা তৈরি হয়। এ সময় সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে কাজ করেন অঞ্জন ভদ্র। সেই সময়েই তখনকার তরুণ সাহিত্যকর্মী কবি কামরুজ্জামান চৌধুরী সাহিত্য সমাজের সাথে যুক্ত হন। কামরুজ্জামান চৌধুরীর ‘স্পার্ক’ নামের কম্পিউটারের দোকানে শহরের স্কুল এবং কলেজ পড়ুয়া তরুণদের একটা আড্ডা ছিল। সেই আড্ডাতে তরুণদের ব্যাপক আগ্রহ ও উদ্দীপনায় নেত্রকোনা সাহিত্য সমাজের নতুন যাত্রা শুরু হয়। মূলত বসন্তকালীন সাহিত্য উৎসব করার প্রেরণা থেকেই নেত্রকোনা সাহিত্য সমাজের একটা তারুণিক মেলবন্ধন তৈরি হয়েছিল। কবি সৈয়দ নাজমুল করিমকে সবাই অভিভাবক জ্ঞান করতেন। তরুণদের প্রস্তাবে তিনি বসন্তকালীন সাহিত্য উৎসব করার বিষয়ে সম্মতি জ্ঞাপন করে একটি নতুন পরিকল্পনা তৈরি করেন। সাহিত্য উৎসবকে সমৃদ্ধিকরণে তিনি কথাসাহিত্যিক খালেকদাদ চৌধুরীর নামে একটি সাহিত্য পুরস্কার প্রদানের প্রস্তাব করেন এবং সবাই তাতে সম্মতি জ্ঞাপন করেন। সেই মিটিংয়ে কবি সৈয়দ নাজমুল করিমকে সভাপতি এবং কবি কামরুজ্জামান চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। এই কমিটির হাত ধরে উনিশ শ ছিয়ানব্বই সালে শুরু হয় সংগঠনের নতুন অভিযাত্রা। শুরু হয় বসন্তকালীন সাহিত্য উৎসব ও খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার প্রদানের বর্ণিল অভিযাত্রা। কিন্তু ব্যক্তিত্বের এক অনির্ণিত কারণে সাহিত্য সমাজের স্বপ্নদ্রষ্টা সভাপতি কবি সৈয়দ নাজমুল করিম দ্রুতই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। তখন সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত হন অধ্যাপক মতীন্দ্র সরকার। মতীন্দ্র স্যারের পরে সভাপতি হন কবি কামরুজ্জামান চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক কবি সাইফুল্লাহ এমরান। কবি কামরুজ্জামান চৌধুরী প্রয়াত হলে আবারও সভাপতি হন অধ্যাপক মতীন্দ্র সরকার এবং সাধারণ সম্পাদক কবি সাইফুল্লাহ এমরান। ২৮ তম আয়োজন থেকে আমি সাহিত্য সমাজের সভাপতি এবং কবি তানভীর জাহান চৌধুরী সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। মূলত কমিটিতে যারাই থাকুন না কেন নেত্রকোণা সাহিত্য সমাজ নেত্রকোণা সর্বস্তরের নাগরিকের সংগঠন। এই আয়োজন সবার। সবাই মিলে এই আয়োজনটিকে সফল করেন। দেশবাসীর কাছে নেত্রকোণার মুখ উজ্জ্বল করেন।

এ-বছর বসন্তকালীন সাহিত্য উৎসব ও খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার প্রদানের ২৮ তম আয়োজন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই অনুষ্ঠান এই অঞ্চলের তথা পুরো বাংলাদেশের প্রাণের অনুষ্ঠান। সাহিত্যচর্চা মানুষের মনকে সুন্দর করে। শান্ত করে। সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত অনেক অগ্রজ আজ লোকান্তরিত হয়েছেন। তাঁদের দোয়া এবং পরম্পরাই আমাদের সম্বল। আল্লাহ তাঁদেরকে ভাল রাখুন। আমরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে, দায়িত্বের সঙ্গে এই আয়োজনকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছি। বসন্তকালীন সাহিত্য উৎসব সবার মনে আনন্দ ও শান্তি তৈরি করুক—এই আমার চাওয়া। উৎসব আয়োজনে সম্পৃক্ত সকলের প্রতি শ্রদ্ধা এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। সবাই ভালো থাকুন। মাহবুবুল কিবরিয়া চৌধুরী হেলিম, সভাপতি ,নেত্রকোণা সাহিত্য সমাজ, নেত্রকোণা

সাহিত্য বিভাগের আরো খবর

আরও খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর