Banglarnetro
Dr. Neem Hakim

হাওড়ে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে ধীরগতি শঙ্কায় কৃষক


বাংলার নেত্র প্রকাশের সময় : জানুয়ারি ২৫, ২০২৫, ৬:৫৩ অপরাহ্ণ / ১৯
হাওড়ে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে ধীরগতি শঙ্কায় কৃষক

বিশেষ প্রতিবেদক : হাওড়ের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু করার নির্ধারিত সময়ের এক মাসেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। নেত্রকোনার ১০ উপজেলার ছোটবড় ১৩১ টি হাওড়ে ১৯১টি ফসল রক্ষা বাঁধের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসির) কাজ চলছে। কাজ শুরুর প্রায় একমাস পেরোলেও কমিটির সদস্যরা এখনো প্রথম কিস্তির টাকা পাচ্ছেন না। এদিকে ফলে বাঁধের কাজ চলছে ধীরগতিতে। এ অবস্থায় হাওরের বোরো ধান রক্ষা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকেরা।
হাওড়ের বোরো ফসল রক্ষা বাঁধের কাজের জন্য নীতিমালা অনুযায়ী জরিপ, গণশুনানি, প্রকল্প স্থান নির্ধারণ, প্রাক্কলন তৈরি ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন ৩০ নভেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। আর ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বাঁধের কাজ শুরু করে তা আগামী বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

ফলে হাওড়ের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ সময়মতো শুরু এবং শেষ করা সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা কৃষকেরা। তবে পাউবো ও প্রশাসনের দাবি, হাওর থেকে পানি নামতে দেরি হওয়ায় এসব কাজ যথাসময়ে শেষ করা যায়নি। শুরু করতে দেরি হলেও নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে বলে দাবি পাউবো’র।

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, জেলায় পাউবোর অধীন প্রায় ৩৬৫ কিলোমিটার ডুবন্ত (অস্থায়ী) বাঁধ আছে। এসব বাঁধের ওপর স্থানীয় কৃষকদের প্রায় ৪৫ হাজার হেক্টর জমির রোরো ফসল নির্ভর করে। গত বছর বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য জেলায় ১৭৮টি পিআইসি গঠিত হয়েছিল। এবার ১৯১টি পিআইসি গঠন করা হয়েছে। ১৪৬.১২ কিলোমিটার বাঁেধর বিপরীতে বরাদ্দ পাওয়া গেছে ৩১ কোটি ৭৮ কোটি টাকা। জেলার মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরী, মদন, বারহাট্টা, কলমাকান্দা, পূর্বধলা ও আটপাড়া উপজেলায় প্রতিবছর হাওড়ে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে পাউবো।

নীতিমালা অনুযায়ী, গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর থেকে বাঁধ পুনর্নিমাণ ও মেরামতকাজ শুরু করে তা আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করার কথা রয়েছে। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বাঁধের কাজের উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু হাওর থেকে পানি নামতে দেরি হওয়ায় পুরোদমে সব কটি বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। চারটি কিস্তিতে চেকের মাধ্যমে বাঁধের কাজের বরাদ্দের টাকা পিআইসিদের দেওয়ার কথা রয়েছে। কাজ শুরুর আগেই পিআইসিদের বরাদ্দের ২৫ শতাংশ টাকার অগ্রিম চেক দেওয়ার কথা। কিন্তু এক মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো প্রথম কিস্তির টাকা পাননি পিআইসিরা।

গতকাল বৃহষ্পতিবার সকাল নয়টা থেকে থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত সরেজমিনে মোহনগঞ্জ উপজেলার ডিঙ্গাপোতা, চন্দ্র সোনার থাল, কীর্তনখলা সহ কয়েকটি হাওড়ে অন্তত ১৫টি ফসল রক্ষা বাঁধের প্রকল্প কাজ ঘুরে দেখা গেছে, বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজগুলো চলছে ধীরগতিতে। বাঁধে কিছু মাটি ফেলে রাখা হয়েছে। কিছু কিছু প্রকল্পে ভেকু দিয়ে মাটি ফেলা হচ্ছে। কয়েকজন শ্রমিক বাঁধে কাজ করছেন।

মোহনগঞ্জ উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামের কাজল চৌধুরী বলেন, ‘বাঁধের কাজ সময়মতো শুরু ও শেষ করা উচিত। বছরের একমাত্র বোরো ফসল ঘরে তোলো সম্ভব হবে। ২০১৭ সালের মতো আর কখনো হাওরের ফসলডুবির ঘটনার করুণ দৃশ্য আমরা দেখতে চাই না।’

একই উপজেলার বরান্তর গ্রামের তানিম খান, গাগলাজুর গ্রামের আব্দুল বারেক বলেন, ‘এখানকার কৃষকেরা হাওরের একমাত্র বোরো ফসলের ওপর নির্ভরশীল। ফসল রক্ষা বাঁধের সব কাজ নির্ধারিত সময়ে শুরু ও শেষ করতে হবে। এবছর এমনিতেই দেরীতে কাজ শুরু হয়েছে। সময়মতো বাঁধ না হলে আগাম বন্যায় হাওরের বোরো ফসল তলিয়ে যেতে পারে।’
খালিয়াজুরী উপজেলার লেপসিয়া এলাকার কৃষক সাইদুর রহমান, শাহিন মিয়া বলেন, ‘হাওড়ে কয়েক বছর পর পর বন্যা হয়। সাধারণত চার বছর পরে একবার বন্যা হয়। ওই হিসেবে এবার আগাম বন্যার সম্ভবনা রয়েছে। আগাম বন্যা হলে বোরো ফসলহানি হতে পারে।’

খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. হাসিবুল আহাসান বলেন, বাঁধের কাজ চলছে। আমরা খোঁজ খবর রাখছি। আশা করছে নির্ধারিত সময়ে বাঁধের কাজ শেষ করা হবে।
জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সারওয়ার জাহান বলেন, এবার হাওর থেকে পানি নামতে দেরি হওয়ায় জরিপসহ পিআইসি গঠনে কিছুটা দেরি হয়েছে। তবে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করতে না পারলেও নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। এ নিয়ে শঙ্কার কিছু নেই।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, হাওড়ের ফসল রক্ষার বাঁধের কাজ খুব গুরুত্বের সাথে তদারকি করা হচ্ছে। এবার হাওর থেকে পানি নামতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তাই নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করা যায়নি। তবে আশা করছি সবকটা পিআইসি’র কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করা হবে।

লিড নিউজ বিভাগের আরো খবর

আরও খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর