Banglarnetro
Dr. Neem Hakim

তুষ পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা উৎপাদন করে দেশে সফল উদ্যোক্তা ইয়াসিন মিয়া 


বাংলার নেত্র প্রকাশের সময় : এপ্রিল ২০, ২০২৫, ৭:১৬ অপরাহ্ণ / ৯০
তুষ পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা উৎপাদন করে দেশে সফল উদ্যোক্তা ইয়াসিন মিয়া 

রানা আকন্দ, ও মোস্তাসিম বিল্লাহ, সিএসও প্রতিনিধি. ইনকুভেটরের যুগে বিদ্যুৎ ব্যবহার না করে তুষ ও হারিকেনের আলোতে হাঁসের বাচ্চা ফুটিয়ে নিজের ভাগ্য বদলেছেন সফল উদ্যোক্তা মোঃ ইয়াসিন মিয়া (৪৫)। নিজের পাশাপাশি ভাগ্য বদলেছেন কয়েকশ’ত যুবকের।

 

এই পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা উৎপাদনে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বদলে গেছে একটি গ্রামের অর্থনীতি। স্বল্প পুঁজিতেই এই ব্যবসা শুরু করেন এবং দ্রুত সফলতাও আসে।

হারিকেন ও তুষ পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা উৎপাদন ও পালন করে গ্রামের বেকারত্ব কেটেছে শতভাগ। সফল উদ্যোক্তা ইয়াসিন মিয়া (৪৫) নেত্রকোনার মদন উপজেলার কুঠুরীকোনা গ্রামের মৃত আক্কেল আলীর ছেলে।

ইয়াসিন মিয়ার কাছ থেকে এই পদ্ধতি শিখে নেত্রকোনার মদন উপজেলার কুঠুরীকোনা গ্রামের ৮৫ ভাগ মানুষ এখন স্বাবলম্বী। হাওর এলাকা হওয়ায় এই গ্রামে কৃষির পাশাপাশি সহজভাবে হাঁস পালন ও উৎপাদন করছেন এলাকাবাসী। কেবল হাঁস পালন করেই মাসে কোটি টাকা আয় করে গ্রামের অধিকাংশ মানুষ।

সফল উদ্যোক্তা ইয়াসিন মিয়া জানান, মাত্র ১১ বছর বয়সে ১৯৯০ সালে ১০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ইয়াসিন মিয়া শুরু করেন তুষ ও হারিকেন পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা উৎপাদন ও পালন। বাংলাদেশে প্রথম এই পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা উৎপাদন করে সফল হয়েছেন তিনি।পারিবারিক পুঁজি নিয়ে ২ হাজার ডিম দিয়ে প্রাথমিকভাবে উৎপাদন শুরু করেন ইয়াসিন।

প্রথম দিকে ২ হাজার ডিম থেকে ৫’শত বাচ্চা ফুটাতে সক্ষম হন তিনি। এরপর থেকে তার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্য আরো দৃঢ় হতে থাকে। শুরুর দিকে লাভ না হওয়ায় পরিবারের সদস্যরা তাকে এই কাজ ছেড়ে দিতে বলেন। কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি। ২০০০ সাল থেকে তার সফলতা আসতে শুরু করে। বর্তমানে তিনি সারাদেশে হাঁসের বাচ্চা বিক্রি করছেন।

তিনি আরো জানান, বর্তমানে তিনি প্রতি মাসে হাঁসের বাচ্চা উৎপাদন করেন ১ লক্ষ ৫০ হাজারেরও বেশি। তুষ পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা উৎপাদন ও পালন করে পাকা বাড়ি নির্মাণ, জমি ক্রয়সহ তিনি আজ কোটিপতি। এক সময় দারিদ্রতার কারণে তিনবেলা খাবার খেতে পারতেন না তিনি। তার মেধা, বুদ্ধি, ধৈর্য ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ইয়াসিন মিয়া এখন সফল উদ্যোক্তা। তিনি নিজের ভাগ্যের পাশাপাশি বদলেছেন পুরো গ্রামের ভাগ্য।

এই ব্যবসার পাশাপাশি তিনি দেশ ও দেশের বাইরে প্রশিক্ষণ করাচ্ছেন বেকারদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে। তার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সারাদেশে তুষ ও হারিকেন পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা উৎপাদনকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে তুলেছেন। হারিকেন ও তুষ পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা উৎপাদনে সফলতার জন্য পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। তিনি আশা প্রকাশ করেন একদিন সরকার তাকে রাষ্ট্রীয় পুরস্কারে ভূষিত করবেন।

কুঠুরিকোনা গ্রামের তুষ ও হারিকেন পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা উৎপাদন এবং পালনে জড়িত হারেছ মিয়া, শহীদুল, আলাল উদ্দিন, শাহিন, রফিকুল ইসলাম, রমজান আলী, কুদ্দুছ মিয়াসহ অনেকেই জানেন, এক সময় আমরা শুধু হাঁস পালন করতাম। আমাদের গ্রামে ইয়াসিন মিয়া তুষ ও হারিকেনের আলোয় হাঁসের বাচ্চা ফুটানোর উদ্যোগ গ্রহণ করে। তার দীর্ঘ প্রচেষ্টায় তিনি সফল হয়েছেন। তার এই সফলতা দেখে আমরা খামার করতে আগ্রহী হই। আগ্রহ দেখে ইয়াসিন মিয়া আমাদের হাঁসের বাচ্চা ফুটানোর প্রশিক্ষণ দেন। তার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা সকলেই এখন স্বাবলম্বী এবং সফল খামারি। তিনি তুষ ও হারিকেন পদ্ধতিতে হাসির বাচ্চা উৎপাদনের প্রশিক্ষণের জন্য একটি বই লিখেছেন। এছাড়াও দেশি-বিদেশে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। বর্তমানে এই পদ্ধতি বাংলাদেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

নেত্রকোনা জেলা তথা বাংলাদেশকে স্বাবলম্বী করে তুলতে এবং প্রোটিনের ঘাটতি পূর্ণ করতে তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। তোর ও হারিকেন পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা উৎপাদনে এসেন মিয়া সকলের আদর্শ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে অনেকেই তার কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে সফলতা আসার পর তা অস্বীকার করে।

এটা মোটেই কাম্য নয়। ইয়াসিন মিয়া বেকারত্ব দূরীকরণ, হাঁস ও ডিম উৎপাদন করে প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করছে। তাকে বাংলাদেশের আদর্শ সফল উদ্যোক্তা হিসেবে জাতীয় স্বীকৃতি দেওয়া প্রয়োজন।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ শহিদুল্লাহ জানান, মদন উপজেলার কুঠুরীকোনা গ্রামের মোঃ ইয়াসিন মিয়া দীর্ঘদিন যাবৎ তুষ পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা ফুটানোর যুগান্তকারী কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। তার তুষ পদ্ধতি ব্যবহার করে ২’শত পরিবার এই কার্যক্রমে জড়িত রয়েছে। ইয়াসিন হাঁস উৎপাদনে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। সারাদেশে তার হাঁস সরবরাহ হচ্ছে। তাকে দেখে অনেকেই সফলতার আনন্দ গ্রহণ করতে পারছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগের উন্নয়নে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য। তার সার্বিক সহযোগিতা প্রদানে প্রাণিসম্পদ বিভাগ প্রস্তুত আছে।

জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, তুষ পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা উৎপাদন এটি একটি অভিনব পদ্ধতি। তার এই সফলতাকে ব্যাপক প্রচার প্রসার প্রয়োজন। সারাদেশে বিভিন্ন জেলায় তার এই পদ্ধতি ব্যবহার বৃদ্ধিতে ট্রেইনার হিসেবে প্রেরণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। যাতে করে তার এই ইনোভেশন জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে।

 

সারাদেশ বিভাগের আরো খবর

আরও খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর