বিশেষ প্রতিনিধি. নেত্রকোণা জেলা কারাগারের জেলার উম্মে সালমার বিরুদ্ধে কারা অভ্যন্তরের স্বেচ্ছাচারিতা, বন্দীদের সঙ্গে মন্দ ব্যবহারসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এনে অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। গত সোমবার বিকেলে শহরের মোক্তাপাড়া এলাকায় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে ‘ভুক্তভোগী ও জেলার সচেতন সমাজ’ এর ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তারের পর আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর কারগার থেকে বেরিয়ে আসা জেলা বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে শুরু হওয়া মানবন্ধনটি যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি খালিদ সাইফুল্লাহ ও জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক অনিক মাহবুব চৌধুরী। জেলা বিএনপি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মো. নুরুজ্জামানের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন, জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আব্দুল মান্নান তালুকদার,সহসভাপতি ইমরান খান চৌধুরী, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইসলাম উদ্দিন খান, জেলা যুবদলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে রনি প্রমুখ।
আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আওয়ামী লীগ সকার বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে তিনি বিভিন্ন মামলার আসামি হন। মামলায় গ্রেপ্তারের পর তিনি জামিনে বেরিয়ে আসার পরেই আবার গ্রেপ্তার হন। এভাবে বছরের বেশির ভাগ সময় তাঁকে কারাগারে থাকতে হয়েছে। সম্প্রতি তিনি জামিনে রয়েছেন। কিন্তু কারাগারের জেলার উম্মে সালমা প্রায় দুই বছর হয়েছে নেত্রকোণায় যোগদান করেছেন। তিনি বন্দীদের সঙ্গে মন্দ ব্যবহার ছাড়াও সীমাহীন দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতার কারণে বন্ধীরা অতিষ্ট।
যুবদলের সহসভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন আরও বলেন, ‘বিএনপির কোন নেতা-কর্মীকে উম্মে সালমা সহ্য করতে পারতেন না। গত কয়েক মাস আগে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব তাকে (আব্দুল্লাহ) কারাগারে গেলে উম্মে সালমা চারদিন খাবার দেননি। এছাড়া তিনি বন্দীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে টাকা আদায় করেন। আমরা অতিদ্রুত তার অপসারণ চাই এবং বিভাগীয় তদন্ত করে দায় হলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।’
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক অনিক মাহবুব চৌধুরী বলেন, ‘উম্মে সালমা কারাগারকে টাকা কামাইয়ের মুখ্য স্থান হিসেবে গড়ে তুলেছেন। কারাগারে খাবারের মান এত মন্দ যা বোঝানো যাবেনা। তিনি সব সময় আওয়ামী লীগের দাপট নিয়ে চলেন। বিএনপি ও জামাতের কোন নেতা-কর্মীকে সহ্য করতে পারেনা। কারাগারে একটা ডিম ৮০ টাকা, এক কেজি গরুর মাংস ২৭০০ টাকা, খাসির মাংস তিন হাজার টাকা, মাছের কেজি এক হাজার, বয়লার মুরগরি কেজি ৮০০ টাকা, ৬ টাকার টিকেট ৬০০ টাকা পর্যন্ত রাখা হয়। জামিন হয়ে গেলেও বিভিন্ন অজুহাতে টাকা আদায় করেন তিনি। প্রতিবাদ করলে বলতেন আমার এই টাকা উপরমহল পর্যন্ত যায়। উম্মে সালমার এসব অপকর্মের সঙ্গে সদ্য অবসর নেয়া জেল সুপার আনোয়ার হোসেনও জড়িত ছিলেন।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেনের মুঠোফোন বন্ধপাওয়া যায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে গত ৩১ ডিসেম্বর তিনি অবসরে চলে যান।
তবে জেলার উম্মে সালমা মুঠোফোনে বলেন, ‘বিষয়টি আমি বুঝতে পেরেছি, এই আন্দোলনে একজন নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এটা অবসর নেয়া জেল সুপার স্যারের প্রতি বন্দীদের রাগ ছিল। সুপার স্যার ১৫ দিন পর পর বন্দীদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করাতেন এ নিয়ে রাগ ছিল বন্দীদের। আর আমি তো ঊধ্বর্তনদের বাইরে যেতে পারিনা। কারো সঙ্গে মন্দ ব্যবহার বা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নই। অহেতুক অপবাদ দেয়া হচ্ছে। অপর প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি যদি ক্ষমতার অপব্যবহার দেখাতাম তাহলে কি নেত্রকোণায় চাকুরি করি? কিন্তু আমি সরকারি চাকরি করি, কোন দলের সঙ্গে সংযুক্ত নই। সরকারি আদেশ বিধিমোতাবেক যথাযথ অনুসরণ করে চলার চেষ্টা করি। সব বন্দীরা আমার কাছে সমান।’
আপনার মতামত লিখুন :