ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের একটি নালিশি মামলায় (সিআর) ‘ভুয়া পরোয়ানায়’ সাত দিন ধরে কারাগারে আছেন ইলিয়াস হোসেন (২৭) নামের এক কৃষক। তিনি ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ থানার সিংদাহ গ্রামের মৃত সামসুদ্দিনের ছেলে।
গত ৪ জুলাই থেকে ইলিয়াস ঝিনাইদহ কারাগারে আছেন। ওইদিন বাড়ি থেকে কালিগঞ্জ থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর ইলিয়াস জানতে পারেন, ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ৭ নম্বর আদালতের প্রতারণা ও জাল জালিয়াতির একটি মামলায় পরোয়না অনুযায়ী তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কখনো ঢাকায় আসেননি ইলিয়াস। কীভাবে ঢাকায় তার বিরুদ্ধে মামলা হলো এবং পরোয়ানা হলো, তা শুনে আকাশ ভেঙে পড়ে তার মাথায়। কালিগঞ্জ থানা পুলিশকে সে কথা জানালেও তারা কোনো খোঁজ না নিয়েই ঝিনাইদহ আদালতে তাকে হাজির করে। ঝিনাইদহ আদালত জামিন অযোগ্য ধারা বিবেচনায় জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান।
ইলিয়াসের পক্ষে জামিন আবেদন করেন ঝিনাইদহ আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আকিদুল ইসলাম। এরপর মামলার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তিনি ঢাকার সরদঘাটস্থ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের আইনজীবী মো. মফিজুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। মফিজুল ইসলাম ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ৭ নম্বর আদালতে পরোয়ানা নিয়ে যোগাযোগ করেন। তিনি দেখতে পান, সেই আদালত পল্টনের নয়, গুলশান আমলী আদালত। সেখানে সিআর মামলাটি (নং-১৫৮৪/২০২৪) চেক প্রতারণার মামলা। সে মামলার আসামির নামের সাথেও গ্রেপ্তারকৃত আসামির কোনো মিল নেই। ফলে, তিনি ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ২৭ নম্বর সিআর (পল্টন) আমলী আদালতে খোঁজ নেন। দেখতে পান, চলতি বছরে এ পর্যন্ত ৫ শতাধিক মামলা দায়ের হয়েছে। ফলে, সে আদালতে সিআর মামলা নং-১৫৮৪/২০২৪ থাকার কোনো সম্ভবনা নেই। আইনজীবী বুঝতে পারেন, ইলিয়াসের বিরোধীরা পূর্বশত্রুতার জের ধরে ভুয়া পরোয়ানা তৈরি করে কালিগঞ্জ থানায় পাঠিয়েছে।
আইনজীবী মফিজুল ইসলাম ভুয়া পরোয়ানার বিষয়টি আইনজীবী আকিদুল ইসলামকে নিশ্চিত করার পর তিনি ঝিনাইদহ আদালত থেকে ইলিয়াস হোসেনকে কারাগারে পাঠানোর নথি ঢাকার আদালতে পাঠানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু, বুধবার পর্যন্ত তা ঢাকার আদালতে আসেনি।
মফিজুল ইসলাম বলেন, ভুয়া পরোয়ানা হলেও যে আদালতের পরোয়ানা দেখনো হয়েছে, সে আদালতে কারাগারে পাঠানোর কাগজপত্রসহ আবেদন করে কারামুক্তির আদেশ নিলে ইলিয়াস কারামুক্ত হতে পারবেন। আমরা চেষ্টা করছি, ঝিনাইদহ আদালত থেকে কারাগারে পাঠানো নথি আনার।
তিনি বলেন, এরকম ভুয়া পরোয়ানায় অনেক মানুষ গ্রেপ্তার হচ্ছেন। তাই, থানায় কোনো পরোয়ানা গেলে থানা কর্তৃপক্ষের উচিত তা আগে যাচাই কারা। তারপর আসামি গ্রেপ্তার করা। তাহলে এভাবে কোনো মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হবে না।
আপনার মতামত লিখুন :